পরিবেশবান্ধব পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আগ্রহ সব সময়। ব্যবসায়ীরা বরাবরই ক্রেতাদের আগ্রহের মূল্যায়ণ করে পোশাক রপ্তানি করে থাকেন। বর্তমানে ক্রেতাদের আগ্রহ 'রিসাইক্লিং' পণ্যের ওপর। বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোতে অংশ নেয়া পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। বাংলাদেশ এপারেল এক্সচেঞ্জ এই এক্সপোর আয়োজক।
কথা হয় এক্সপোতে অংশ নেয়া পাইওনিয়ার ডেনিমের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হাসিবুল হুদার সঙ্গে। তিনি জানান, ক্রেতারা এখন পরিবেশবান্ধব পোশাকের দিকে জোর দিচ্ছেন। তাদের শর্তও থাকে এতে। সেজন্য রিসাইক্লিং ডেনিমে জোর দিচ্ছেন তারা। রিসাইক্লিং ডেনিম হচ্ছে ব্যবহৃত পুরোনো কাপড়কে রাসায়নিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে আবার ব্যবহার উপযোগী করা। নতুন উদ্ভাবিত রিসাইক্লিং পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জিরো কটন, পোস্ট কনজুম্যার ওয়েস্ট এবং টেনসেল। এর মধ্যে জিরো কটনই নতুন। পুরোনো কাপড়কে রাসায়নিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করে নতুন কাপড় বানানো হয়। মোদ্দাকথা ফেলে দেয়া গার্মেন্টস থেকে এর প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এটি পরিবেশবান্ধবও।
তিনি আরও জানান, তাদের কোম্পানির ডেনিম পোশাকের উৎপাদন প্রতিমাসে ২৮০ মেট্রিক টন। জিরো কটন কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও উন্নত বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা আছে। এইচএনএম, ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানি এখন এই পণ্যের রপ্তানি আদেশ দিচ্ছে।
এক্সপোতে আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেনিম পণ্য নিয়ে হাজির স্কয়ার ডেনিম। কথা হয় কোম্পানির সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ তানভির মাহমুদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ক্রেতাদের শর্তানুযায়ী উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেনিম উৎপাদন করছে স্কয়ার। তাদের উৎপাদিত রিসাইক্লিং ডেনিমগুলোর মধ্যে রয়েছে পেট-ইট, ইজার, রাইট বস্নু ইত্যাদি। এর মধ্যে ফেলে দেয়া পস্নাস্টিক বোতল থেকে রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত ডেনিমকে বলা হচ্ছে পেট-ইট। এই ডেনিম পোশাক বাংলাদেশে পাওয়া না গেলেও ইউরোপের বাজারে এর চাহিদা বেশি।
তিনি আরও জানান, রাইট বস্নু ডেনিম তৈরি হয় মূলত এনিলিন কেমিক্যাল ব্যবহারের মাধ্যমে। যেটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তুরস্কের একটি কেমিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে স্কয়ার ডেনিম। এ ছাড়া ইজার ডেনিমটি মূলত লেজার ওয়াশের মাধ্যমে বানানো। কেমিক্যালের কোনো ব্যবহার হয় না এতে। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি। আর প্রতি মাসে ২৪ লাখ গজ ডেনিম রপ্তানি করে থাকে স্কয়ার।
বাংলাদেশ এপারেল এক্সচেঞ্জ ও বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, পৃথিবীতে এখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক উৎপাদিত হচ্ছে। এই পোশাক পুনঃব্যবহার, পুনঃউৎপাদন কিংবা আবার কাজে লাগানো সম্ভব। একমুখী মডেল পরিবর্তন করে টেকসই ভবিষ্যতের জন্য 'সার্কুলারিটি'র প্রয়োজনীয়তার ওপর ডেনিম এক্সপোর এবারের সংস্করণের জোর দেয়া হয়েছে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করে। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ইউরোপের বাজারে বছরের ব্যবধানে ডেনিম রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
'রিসাইক্লিং' ডেনিমে আগ্রহ ক্রেতাদের
May 03, 2019